• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮

সারা দেশ

পায়কারদের সিন্ডিকেট,ধানের ন্যায মূল্য পাচ্ছে না হাওর পাড়ের কৃষক

  • ''
  • প্রকাশিত ৩০ এপ্রিল ২০২৪

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

বাজারে সবতার (সব কিছুর) দাম বাড়ে,খালি(শুধু)ধানের দাম বাড়ে না। সরকারও ধানের দাম ঠিক কইড়া( করে) দেয় না। কৃষকের শ্রমের দাম নাইগা(নাই)। ধানের দাম না বাড়ালে কৃষকের ক্ষতি ছাড়া লাভ নাই। তাইলে (তাহলে) আগামীতে জমিতে আবাদ করবো কিনা চিন্তা করতে হইব (হবে)।

এভাবেই আক্ষেপ করে ধানের দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওর পাড়ে কৃষক সাজিদ মিয়া।

এক কিয়ার জমি চাষ করতে ৫-৬হাজার টাকা খরচ হইছে (হয়)। নিজের খাটা খাটনি(শ্রম) ত বাদই। এখন এক মণ ধানের দাম ৯০০ টাকা। ধানের দামে আর জমির খরচে ফরতায়(হিসাব মিলে না) পড়ে না। সরকার যখন ধানের দাম নির্ধারণ(ঠিক করবে)করব তখন আমরার ধান না বেচলেও চলব। শুধু সাজিদ মিয়াই নয় তার মত ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সুনামগঞ্জের হাওরে পাড়ের হাজার হাজার কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়,আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সুনামগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবাদকৃত ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমি থেকে ১৩ লাখ ৭০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ। যার অর্থনৈতিক মূল্য ৪ হাজার ১১০ কোটির বেশি।

জেলার মাটিয়ান হাওরের কৃষক সাকিল আহমেদ জমির আলীসহ কৃষকরা জানান,ময়ালে( হাওরাঞ্চলে)পাইকারদের একটি সিন্ডিকেট ধানের মূল্য নির্ধারণ করে নিজেরাই ধান কিনতাছে। এমন দামে ধান বিক্রিও করতাছেন কৃষকরা। এতে ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হউতাছি(হচ্ছেন)তারা। তৃণমূল পর্যায়ের ধানের মূল্য নির্ধারণের দাবি সকল কৃষকদের।

জেলার বিভিন্ন হাওরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,হাওরের গভীর থেকে সোনার ধান কেটে খলায় এনে মাড়াই,শুকানো,গোলায় তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন কৃষক-কৃষাণীরা। সাথে যোগ দিয়েছেন তাদের ছেলে মেয়েরা। ধান কাটাসহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে বাধ্য হয়ে উৎপাদিত ধান খলায় বিক্রি করছেন কৃষকরা। এই সুযোগ পায়কাররাও সিন্ডিকেট করে ধানের মুল্য কমিয়ে ক্ষয় করছে। আর কৃষকরা বেশি দামে বিক্রি করতে না পেরে কম মূল্যে বিক্রি করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,স্থানীয় পাইকার ও বেপারিদের কাছে মণ প্রতি সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় ধান বিক্রি করছেন তারা। পাইকারদের সিন্ডিকেট ধানের এই দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কৃষকরা নিরুপায় হয়েই তাদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করছেন।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানিয়েছেন, জেলার বিভিন্ন হাওরে ইতিমধ্যে আবাদকৃত জমির অর্ধেকের বেশি ধান কাটা হয়েছে। আর সপ্তাহ দশ দিনের মধ্যে হাওর এলাকার শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন,এক কিয়ার(৩০ শতাংশে এক কিয়ার)জমি চাষ করতে কৃষকের যে খরচ হয়,ধানের এমন দামে তা পোষায় না। পাইকাররা ইচ্ছে মত ধানের মূল্য নির্ধারণ করে। পাইকারদের সিন্ডিকেটের জালে কৃষকরা আটকে গেছে। ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত আমরা। মণ প্রতি ১৫০০ থেকে ১৬০০টাকা পেলে কৃষকরা লাভবান হত।

জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের কৃষক জামিল মিয়া বলেন,স্থানীয় পর্যায়ে ধানের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে দিলে কৃষকরা লাভবান হত। আর এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, না হলে কোন লাভ হবে না। কৃষকরা যুগ ধরে বঞ্চিত হচ্ছে আরও বঞ্চিত হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম ভুঁইয়া জানিয়েছেন,সরকারি ভাবে ধান ক্রয়ের দাম ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবে জেলা পর্যায়ে কি পরিমাণ ধান ক্রয় করা হবে তা এখনও জানা যায় নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads